আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাবা-মা, দুই ভাই এক বোন মোট ৫জন। দুই ভাইয়ের মধ্যে আমি বড়। চরম দারিদ্রের মধ্যেও পড়াশোনা ও দিন যাপন করতে হয়। 1996 সালে এসএসি এবং 1998 সালে এইচ এস সি পরীক্ষার পর ঢাকা চলে যায়। শুরুতে কম্পিউটারের কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায় এবং মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল এবং ২০০০ সালে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে থাকি। 2010 সাল পর্যন্ত কোন সুবিধা করতে না পেরে বাড়িতে চলে আসি। দুঃচিন্তার মধ্যে চলতে থাকি এবং আয়ের বিভিন্ন উৎস খুজতে থাকি। এর মধ্যে বিবাহ সম্পন্ন হয় 30শে জুন 2007 সালে এবং আমার স্ত্রীও মাষ্টার্স শেষ করার পর কম্পিউটার কোর্স শেষ করে। সিদ্ধান্ত নেই আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার।
২০১০ সালে আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব এম. এ. সাহিদ আমাকে খবর দেন এবং ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে আবেদন করতে বলেন। কথা অনুযায়ী কাজ করলাম। উপকরণ হিসাবে পেলাম একটি ডেক্সটপ, একটি ল্যাপটপ কম্পিউটার, ১টি লেজার ও ১টি কালার প্রিন্টার্স, ১টি ডিজিটাল ক্যামেরা, ১টি প্রজেক্টর, ১টি স্ক্যানার ও সেবার পরিমান ছিলো মাত্র ৫-৬ টি। আয় ছিলো মাসে ২০০০/২৫০০ টাকা মাত্র। ধীরে ধীরে আমাদের সেবার সংখ্যা বাড়তে থাকে ও আয় বৃদ্ধি হয়। বর্তমানে আমাদের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে সেবার পরিমান ১০০ +। তৈরী হয়েছে আমাদের মনোবল। বর্তমান আমাদের রয়েছে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, একটি এজেন্ট ব্যাংকিং, তাছাড়া পাসপোর্টে আবেদন ও ই-চালানের মাধ্যমে পাসপোর্টের ফি ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর ফি জমা নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ শতাধিক সেবা। অর্জন করেছি উপজেলার শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পুরস্কার, জেলার শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পুরস্কার ও বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পুরস্কার। ব্যাংকিং সেবায় (মধুমতি ডিজিটাল ব্যাংকিং এ) সারা বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম হয়েছি এবং পুরস্কার স্বরুপ একটি ভালো মানের ডেস্কটপ কম্পিউটার পেয়েছি। মান্যবর জেলা প্রশাসক (উম্মে সালমা তানজিয়া) স্যার খুশি হয়ে একটি ভালো মানের ডেস্কটপ কম্পিউটার প্রদান করেন। এ পর্যন্ত মোট ৩৩০ জন শিক্ষিত যুবক ও যুব মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তারা বর্তমানে আয়মূলক কার্যক্রমে জড়িত রয়েছেন। এই অর্জনের পাশাপাশি সবার ভালোবাসায় হতে পেরেছি সভাপতি, মধুখালী উপজেলা উদ্যোক্তা ফোরাম ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদপুর জেলা উদ্যোক্তা ফোরাম। (উল্লেখ্য থাকে যে, আমাদের মধুখালী উপজেলায় মোট ১১ টি ইউনিয়ন এবং জেলায় ৮১টি ইউনিয়ন রয়েছে)। এ পর্যন্ত আমাদের নিজ সেন্টারে ৪ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। আশা করছি আগামী বছরের মধ্যে ১০ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবো ইনশাল্লাহ। আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় আমাদের মাসিক আয় ৭৫-৮০ হাজার টাকা। সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেখা, জেলা প্রশাসনের জেলা প্রশাসক স্যার এর সাথে সরাসরি আলোচনা করা এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারের সাথে যেকোন সময় আলোচনা করার সুযোগ।
সর্বশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও এটুআই কে যাদের কারণে আজ আমার আর্থিক স্বচ্ছল, সম্মান, পরিচিতি সারা দেশব্যাপী। আমাদের দুঃচিন্তা দুর করার পাশাপাশি আরো কয়েকজনের দুঃচিন্তা দুর করতে পেরেছি।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস